রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:কর্তৃপক্ষের অযত্ন-অবহেলায় ব্যাহত হচ্ছে বরিশাল নগরীর বক্ষব্যাধি (টিবি) হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। জরাজীর্ণ ভবন, জনবল সংকট আর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে এখানে। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যেন যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত। অথচ এটি বরিশাল বিভাগের একমাত্র বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। এমনকি মাঠ, দীঘি আর গাছপালায় ভরা হাসপাতাল কমপ্লেক্স এলাকায় নির্মিত ক্লিনিকের অবস্থাও একই। ফলে সেখানে কাঙ্খিত সেবা তো দূরের কথা ন্যূনতম ভরসাও রাখতে পারছে না সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, শহরের উত্তর অঞ্চলের আমানতগঞ্জে ১১ একর জমিতে ষাটের দশকে নির্মিত হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু ২০ শয্যার এই হাসপাতালে ১৬টির মধ্যে ১২টি পদে কাগজে-কলমে লোক থাকলেও বাস্তবে নেই।হাসপাতালে সহকারী নার্স পদে তিনজনের স্থলে একজনও নেই, কুকের দু’টি পদের একটি শূন্য। ঝাড়ুদারের দু’টি পদের মধ্যে একজন ডেপুটেশনে সিভিল সার্জন অফিসে আর অন্যজন সদর হাসপাতালে কর্মরত। সব মিলিয়ে অনুমোদিত ১৬টি পদের ৬টিই শূন্য রয়েছে।
তবে সিনিয়র স্টাফ নার্সের তিনটি পদের স্থলে ডেপুটেশনে একজন আসায় একজন বেশি রয়েছেন। অফিস সহকারীর পদ না থাকলেও সে পদে ১০ বছর আগে ডেপুটেশনে এসে দায়িত্ব পালন করছেন এক নারী। হাসপাতালের বক্ষব্যাধি ক্লিনিকেও ১৭টি পদের বিপরীতে ১৪ জন কর্মরত। গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র কনসালট্যান্ট (টিবি অ্যান্ড লেপ্রোসি) ও সহকারী নার্সের একটি করে পদ থাকলেও সে দু’টি শূন্য রয়েছে। নার্সবিহীন ক্লিনিকে মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসা সেবা চলছে। অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় চালকের পদটিও শূন্য।মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে সরেজমিনে হাসপাতাল কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, সংস্কারের অভাবে স্যাঁতস্যাঁতে ভবনের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে সব জায়গায় ময়লার স্তূপ জমেছে।
হাসপাতালের ডাক্তার মাসুমা আক্তার অভিযোগ আকারে বলেন, সুইপার ও গার্ড না থাকায় নোংরা ও অরক্ষিত থাকছে হাসপাতাল কমপ্লেক্স। ভবনের অবস্থা বেহাল হওয়ার কারণে বৈদ্যতিক বাতিও জ্বলছে না। ফলে মাদকসেবী-বখাটেদের উৎপাতে নারীদের রাতে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে থাকা অনেকাংশে কষ্টাসাধ্য।
হাসপাতালের রোগী আসমা বেগম (৫০) জানান, টয়লেটের দরজা ভাঙা। ওয়ার্ডে জানালার গ্লাস না থাকায় ভেতরে বাতাস আসছে। সব সময় চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া হাসপাতালে ল্যাব না থাকায় বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
এদিকে ২০১৪ সালে নারী ও পুরুষ রোগীদের জন্য আলাদা এবং স্পেশালাইজড দু’টি এমডিআর কক্ষ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও তা চালু হয়নি।
ক্লিনিকে রয়েছে ল্যাবরেটরি, জিন এক্সপার্ট কক্ষ ও এক্স-রে মেশিন। ম্যানুয়াল পদ্ধতির এক্স-রে মেশিনটির জন্য বরাদ্দ কক্ষে রেডিয়েশন রোধক কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরো ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে, দরজা-জানালাগুলোও ভাঙা।
অবশ্য এই দুরাবস্থার বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, সীমিত জনবল দিয়েও হাসপাতাল ও ক্লিনিক মিলে ইনডোর ও আউটডোর সেবা চালু রয়েছে। ক্লিনিকটিতে ডায়াগনোসিসের জন্যও রোগী পাঠানো হয়। কিন্তু এখানে জুনিয়র কনসালট্যান্ট নেই। ফলে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আর পদ না থাকায় গার্ড দেওয়া সম্ভব নয় বলে রাতে নিজস্ব ব্যবস্থায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে লোক রাখা হয়।
যে বিষয়টি সাম্প্রতিকালে চিঠির মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এসে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং সমস্যাগুলো সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন।
Leave a Reply